সরাইল প্রতিনিধি | রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯ | পড়া হয়েছে 375 বার
মরে গিয়ে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি নিয়েছে সৌদি আরব ফেরত আসমা। সৌদি আরবে সইতে হয়েছে শারিরিক নির্যাতন। রক্ষা পেতে ‘স্বেচ্ছায়’ কারাবাস করেন। সেখানেও স্বস্তিতে ছিলেন না। পরে দেশে ফিরেন। এখানেও কোনোভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। তাই মানসিকভাবে খুব বেশি ভেঙ্গে পড়েছিলেন তিনি।
অবশেষে মরে গিয়ে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি নিলেন আসমা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের দেওয়ান আলীর মেয়ে আসমা গত ২০ নভেম্বর আত্মহত্যা করেন। ২০ নভেম্বর রাতে বোন জামাইয়ের বাড়িতে ঘরের আঁড়ার সাথে ওড়ান পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
তবে আসমার মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকার কারণে ময়না তদন্ত ছাড়াই তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে।
১৯ বছর বয়সি আসমা তিন বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। আসমাকে হারিয়ে পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম।
পারিবারিক সূত্র জানায়, আসমার পরিবার সিলেটে ভাড়া বাসায় থাকতো। সংসারে স্বচ্ছলতায় আশায় আসমা ঢাকায় গার্মেন্টে চাকুরি নেয়। সেখানে প্রায় তিন বছর কাটায়। সুযোগ পেয়ে মাস ছয়েক আগে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। প্রথম তিন মাস ১৮ হাজার টাকা করে পাঠায়। এরপর থেকে তাঁর উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। বাঁচতে গিয়ে নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দেন। সেখান থেকে দেশে ফিরেন ২৭ অক্টোবর। দেশে এসেও অস্বস্থিতে ছিলেন আসমা। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া আসমা আরো যন্ত্রণার মধ্যে পড়েন নানা কথায়। গত ২০ নভেম্বর বোন জামাই হোসেন মিয়ার নন্দীপাড়ার বাড়িতে আত্মহত্যা করেন তিনি।
আসমার বোন আনোয়ারা বেগম জানান, চিপস আনার কথা বলে তাকে বাইরে পাঠানো হয়। এসে দেখেন দরজা আটকানো। ঝুলন্ত অবস্থা থেকে আসমাকে উদ্ধার করে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আসমার মা রহিমা বেগম জানান, সৌদি থেকে আসার পরই আসমাকে মনমড়া দেখা যায়। সৌদিতে শারিরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সে। সে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরেই আসমা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কালীকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মো. ধন মিয়া রবিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘মেয়েটি কিছুদিন আগে সৌদি থেকে দেশে আসে। সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়ে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। এ কারণেই হয়তো আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।
কালীকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শরাফত আলী জানান, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। হয়তো মানসিক যন্ত্রণার কারণেই সে এমন করেছে। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় পুলিশ ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করতে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাহাদাৎ হোসেন টিটু জানান, সৌদি থেকে ফিরেও মেয়েটি মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ছিল। মানসিক তৃপ্তির জন্য তাকে বোন জামাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে পাঠানো হয়। সেখানেই একদিন থাকার পর সে আত্মহত্যা করে। মানসিক যন্ত্রণা থেকেই সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিবারের কোনো অভিযোগ ছিল না।