বাঞ্ছারামপুর প্রতিনিধি : | বুধবার, ২১ মার্চ ২০১৮ | পড়া হয়েছে 214 বার
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭। রবিবার। রাতভর তুমুল ঝড়। কয়েকদিন ধরে নিয়ম করে বৃষ্টি হচ্ছিলো। ভারী বৃষ্টিতে নদীতে যেমন পানি বেড়েছিলো, রাস্তাঘাটেও তেমনি পানি আর পানি। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামের একমাত্র সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি ধসে পড়ে। ধসে পড়ে হতদরিদ্র সোহেল চন্দ্র দাস ও রাখাল চন্দ্র দাসের জীবন-জীবিকার একমাত্র বাহন পাশাপাশি রাখা দুটি মাছ ধরার নৌকার উপর। নৌকা দুটি জেলেদ্বয় মাছধরা শেষে নদীর ধারের মিরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের কাছে বেঁধে রেখেছিলো। আওয়ামী লীগ সরকার ৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পর সারাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নের মতো মিরপুর গ্রামে লোকসংখ্যা বেশী হওয়ায় সেখানে সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকটি স্থাপন করে। উল্লেখ্য, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মানুষ বসবাস করে এই ইউনিয়নে। ইউনিয়নটিতে প্রায় ৩০ হাজার লোকের একমাত্র ভরসা ছিলো চিকিৎসা কেন্দ্রটি। ৭ মাস চলে গেলেও স্বাস্থ্য বিভাগ অথবা সরকার ক্লিনিকটি পুণ:নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে, চিকিৎসা নিতে হলে গ্রামবাসীকে যেতে হয় উপজেলা সদরে।
এ বিষয়ে কথা বললে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার মন্জুরে মওলা বলেন,-‘আমরা জেলা অফিসারের কাছে লিখিতকারে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা যদি দ্রুত কাজ না করে আমি কি করতে পারি? তবুও, আবারো তাগাদা দিয়ে পত্র দিবো’।
এদিকে, মিরপুর গ্রামের দিন আনে দিন খায়-এমন হতদরিদ্র হিন্দু পরিবারের কর্তা সোহেল চন্দ্র ও রাখাল চন্দ্র দাস ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও আজো সেই ঝড়ের আঘাতে ভেঙ্গে পড়া ক্লিনিকের দেয়াল, ইট-রড নৌকার উপর পড়ে চুরমার হয়ে যাওয়া নৌকা দুটি মেরামত করতে পারেনি। একই গ্রামের তাদের প্রতিবেশী রুপসদী বৃন্দাবন স্কুলের ছাত্র সঞ্জয় কুমার জয় জানান, জেলে দাদাদের নৌকা দুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা অর্ধাহারে আছেন। তাদের কাছে বাড়তি ১ হাজার টাকাও নাই যে নৌকা দুটি মেরামত করবেন। তারা বর্তমানে অন্য জেলে মহাজনদের কাজ করে দৈনিক দেড়-দুশো টাকা পায়, তা দিয়ে পরিবার চালাতে কষ্ট হয়। কারণ,সবদিন কাজ জুটে না।
জেলেদের বাড়ি যেয়ে তাদের না পেয়ে প্রতিবেশী সঞ্জয়ের সাথে কথা বললে সে আরো জানায়, সমাজের কোন বিত্তবান ব্যক্তি যদি এই দুটি গরীব জেলেকে হাজার দশেক টাকা সাহায্য করতো তবে তারা কাঠ, রং, গজাল, তারকাটা কিনে মিস্ত্রী দিয়ে ভাঙ্গা নৌকার পাটাতনগুলো মেরামত করে আগের জীবনে ফিরে যেতে পারতো।